পৃথিবীতে ধনী,গরীব, মধ্য-বিত্ত, ক্ষমতাসীন সব ধরনের মানুষ এর বসবাস। এর মধ্যে কিছু ব্যক্তি আছেন যারা তাদের কাজ এবং ক্ষমতার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে ইতিহাস গড়েছেন।তাদেরকে পৃথিবীর মানুষ সব সময় স্মরণ করবে।এমন কিছু ব্যক্তির সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই অল্প-সল্প জানি। কিন্তু তারা কিভাবে ক্ষমতাবান হলেন তা আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা। তাদের জীবন-সংগ্রাম, ক্ষমতাবান হবার পেছনের গল্পটা আমাদের জানা দরকার।পৃথিবীর ক্ষমতাবান ব্যক্তিগণদের দেখে বুঝা যাবেনা তারা এই ক্ষমতায় আসার আগে কতটা সংগ্রাম করে বাধা পার করে এসেছেন।তাদের জীবনে অনেক দু:খ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
পৃথিবীর এই ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি বিশেষভাবে স্মরণীয় তারা হলেন-

১.ভ্লাদিমির পুতিন – পৃথিবীর সব চেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় প্রথমেই চলে আসে ভ্লাদিমির পুতিন এর নাম।তার নাম আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি।তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ৭ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে জন্ম হয় ৬২ বছর বয়সী এই প্রভাবশালী এবং সফল রাজনৈতিকের। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল এবং সবশেষে দ্বিতীয় মেয়াদে ৭ মে, ২০১২ তারিখ হতে বর্তমান পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। শুধু তাই নয় বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ও তিনি আছেন।রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মিঃ পুতিনের বাৎসরিক বেতন এক লাখ ১২ হাজার ডলার। কিন্তু দুই বছর আগে মার্কিন ট্রেজারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি তার সম্পদ অনেক বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছেন।২০০৭ সালের একটি সিআইএ নথিতে জানা যায়, তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।
পুতিনের বাবা একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং তাঁর দাদা ছিলেন একজন বাবুর্চি।তিনি যেখানে বেড়ে উঠেছেন, সেখানে ছোট বয়সে তাঁর সাথে স্থানীয় ছেলেদের সংঘাত শুরু হয়ে যায়। সেজন্য পুতিন জুডো খেলা রপ্ত করেন। স্কুলের পড়াশুনা শেষ করার আগেই পুতিনের স্বপ্ন ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে কাজ করার।তাঁর লড়াকু মনোভাব বিভিন্ন সময় নিজের কথাবার্তায় ফুটে উঠেছে।২০১৫ সালে পুতিন বলেছিলেন , “কোন লড়াই যদি অবশ্যম্ভাবী হয়, তাহলে প্রথম আঘাতটা আপনাকেই করতে হবে।”

পঞ্চাশ বছর আগে লেলিনগ্রাদের রাস্তা থেকে তিনি এমন শিক্ষা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।আইন শাস্ত্র পড়াশুনা করা পুতিন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন।স্নায়ু যুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে কেজিবির গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেন।পরবর্তীতে তাঁর শাসনকালে সাবেক কেজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।১৯৯৭ সালে বরিস ইয়েলেৎসিন যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তখন ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে আসেন এবং তাঁকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা করা হয়।
কেজিবির পরবর্তী সময়ে এ সংস্থাটি গঠন করা হয়েছিল।
১৯৯৯ সালে নতুন বছরের প্রাক্কালে মি: ইয়েলেৎসিন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।নিজের বেড়ে ওঠার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পুতিন একবার বলেছিলেন – “আমি খুব সাধারন একটি পরিবার থেকে এসেছি। (একটি সাধারন পরিবারের সন্তান হিসেবেই) আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছি। আমি নিজেও একজন স্বাভাবিক সাধারন মানুষের মত জীবন কাটিয়েছি – এবং সব সময়েই সেই বিষয়টা বজায়ে রেখেছি।”
২০১৩ সালে মি: পুতিনের সাথে তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাঁদের ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, মি: পুতিন শুধুই কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। কাজই ছিল তাঁর নেশা।

২. বারাক ওবামা
বিশিষ্ট ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে বারাক ওবামা অন্যতম। বারাক ওবামার জীবন কাহিনী আসলে একটি দারুন সিনেমার গল্প। জন্মের পরপরই যে গল্পের শুরু হয়। গল্পের বাঁকে বাঁকে রয়েছে সব নাটকীয় মোড় এবং চোখে জল আনার মত সব আবেগী দৃশ্য। ওবামার বাবা-মায়ের গল্পও কিন্তু কম বৈচিত্রপূর্ণ নয়।ওবামার পিতা বারাক ওবামা সিনিয়র কেনিয়ার নায়ানযা প্রদেশের লূও গোত্রের সন্তান ছিলেন। তাঁর বাল্য ও কৈশর কেটেছে আফ্রিকার পথে প্রান্তরে ছাগল-ভেড়া চরিয়ে। এক পর্যায়ে তিনি একটি স্কলারশিপ পেয়ে তাঁর কলেজে পড়ার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে পাড়ি জমান।ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইতে পড়ার সময়ে ওবামা সিনিয়রের পরিচয় ঘটে সহপাঠী সুন্দরী শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এ্যান ডানহামের সাথে। এ্যান এবং বারাক ওবামা সিনিয়র ১৯৬১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন এবং এর ছয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত হনুলুলু শহরে ৪ আগস্ট বারাক ওবামার জন্ম হয়।সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি, তাঁর নিজের অর্জিত অর্থও ছিল প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন চালানোর পক্ষে অনেক কম। তাঁর পূর্বসূরী জর্জ ডব্লিউ বুশের মত তাঁর বাবা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতিও নন। কেনেডি বা ক্লিনটন পরিবারের সাথে তাঁর কোনওরকম কোনও আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল না। ছোটবেলা থেকেই অর্থনৈতিক অনটন ও শ্বেতাঙ্গ প্রধান সমাজে বঞ্চনার শিকার একজন কেনিয়ান মুসলিম পিতার সন্তান বারাক ওবামার হোয়াইট হাউস জয়ের কাহিনী তাই কল্পকাহিনীকেও হার মানায়।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য একজন মানুষের যতগুলো প্রতিকূলতা পার করে আসা সম্ভব, তারচেয়েও অনেক বেশি প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজে বসেছিলেন। তাঁর না ছিল অর্থ, না ছিল পারিবারিক প্রভাব, না ছিল সামাজিক প্রাধান্য, এমনকি শতভাগ আমেরিকানও তিনি নন। এসব ছাড়াও যে শুধু প্রজ্ঞা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সততা দিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা আর সম্মানের আসনে বসা যায় ওবামা সেটা প্রমাণ করেছেন।

নানা-নানীর সাথে থাকার সময়ে ওবামা হাওয়াইয়ের বিখ্যাত পূনাহু একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে ভালো ছাত্রের পাশাপাশি ভালো একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবেও প্রশংসা কুড়ান।১৯৭৯ সালে তিনি দারুন ফলাফল করে একাডেমি থেকে পাশ করেন। একাডেমীতে পড়া মাত্র তিনজন কালো শিক্ষার্থীর একজন হিসেবে তিনি বর্ণবাদের বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং সেইসাথে একজন আফ্রিকান আমেরিকান হওয়া বলতে কি বোঝায় তা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেন।
নিজের বহুজাতিক পরিচয়ের সাথে তাঁর আত্মপরিচয়কে খাপ খাওয়ানোটা তাঁর জন্য কতটা কঠিন ছিল, পরবর্তীতে তিনি তাঁর লেখায় বর্ণনা করেছেন । তিনি লিখেছেন – “আমি লক্ষ্য করেছিলাম ক্রিসমাস ক্যাটালগে আমার মত দেখতে কেউ নেই … এবং সান্তাক্লজও একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ।”ওবামা ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ডের আইন বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরের বছর তাঁর পরিচয় হয় সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইবের সাথে। ট্রাইব ওবামার সাথে কথা বলার পর তার ওপর এতটাই মুগ্ধ হন যে গবেষণা সহকারী হিসেবে তাঁর টিমে যুক্ত হওয়ার ওবামার অনুরোধ ট্রাইব একবাক্যে মেনে নেন।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বছর অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়ে ওবামা সংবাদের শিরোনামে উঠে আসেন ।
মনোনয়নের লড়াইয়ে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দী ছিলেন সাবেক ফার্স্টলেডি, এবং তৎকালীন নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত সিনেটর হিলারি ক্লিনটন। ২০০৮ সালের জুন মাসে ওবামা ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান এবং হিলারি তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেন।২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর ওবামা ৫২.৯ শতাংশ ভোট নিয়ে ৪৫.৭ শতাংশ ভোট পাওয়া রিপাবলিকান প্রার্থী জন কেরিকে পরাজিত করে ৪৪ তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাঁকে সর্বাত্মক সহায়তাকারী ডেলওয়ারের সিনেটর জো বিডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী বছরের ২০ জানুয়ারি ওবামা হোয়াইট হাউজের কার্যক্রম শুরু করেন।

৩.পোপ ফ্রান্সিস
ক্যাথলিক গির্জার ২৬৬তম এবং বর্তমান পাদ্রি/পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের চতুর্থ প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ধর্মীয় নেতার জন্ম ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ এবং বর্তমান বয়স ৭৭। রোমের বিশপ হিসেবে, পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটি উভয়েরই প্রধান।রোমান ক্যাথলিক যাজকদের প্রশিক্ষণ কলেজে পড়াশোনা শুরু করার আগে তিনি কিছুদিন রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ ও ‘নাইট ক্লাব বাউন্সার’ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয়।

৪.বিল গেটস
বিশ্বের এক নম্বর ধনী, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সাবেক সিইও উইলিয়াম হেনরী গেটস (বিল গেটস) প্রভাবশালীর তালিকাতে রয়েছেন ৭ নম্বরে। ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর জন্ম গ্রহন করেন বিল গেটস। টেকনোলোজি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তি।অধ্যাবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কি এনে দিতে পারে তা বিল গেটস শিখিয়েছেন আজকের তরুন প্রজন্মকে। যার দরুন আজকের শ্রেষ্ঠ ধনীর তকমাটা নিজের নামের সাথে মোটামুটি পাকাপোক্তভাবেই লাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।বিল গেটস এর পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। তার স্কুল জীবন শুরু হয় ১৩ বছর বয়সে লেকসাইড স্কুল থেকে এবং তিনি সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এই সময় তিনি মোট ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে হার্ভার্ড কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। হার্ভার্ড এ পড়ার সময় গেটস এর নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল না শিক্ষাগ্রহন বিষয়ে। কিন্তু তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন কলেজের কম্পিউটার ল্যাবে। তিনি পরবর্তীতে ১৯৭৪ এ হানিওওেল নামক একটি ক্লাবে যোগ দেন। সেই বছরই তিনি তার বন্ধু পল এলেন কে সাথে নিয়ে তৈরী করেন এম.আই.টি.এস ‘৪৪০০’ যা ইন্টেল ৮০৮০ সিপিইউতে ব্যবহার উপযোগী। এই আবিষ্কারের পরে গেটস সফটওয়ার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং হার্ভার্ড ত্যাগ করেন। মুলত তার সাফল্যের যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়। পরবর্তী আই.বি.এম ১৯৮০ গেটস কে আই.বি.এম পিসি এর অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে কাজ করতে অনুরোধ করেন। মাইক্রোসফট সর্বপ্রথম তাদের বানিজ্যিক সম্প্রসারন শুরু করে ১৯৮৫ সালের ২০শে নভেম্বর থেকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর মাধ্যমে। এই সময়ও তারা আই.বি.এম এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৯১ এ মাইক্রোসফট কোম্পানি আই.বি.এম থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করে। বিল গেটস মাইক্রোসফট এর সিইও ও প্রধান আর্কিটেক্ট ছিলেন। তিন সন্তানের জনক বিল গেটস বর্তমানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হিসাবে খ্যাত। বর্তমানে গেটস ৭২.৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার এর মালিক। এই অর্থের একটি বিশাল অঙ্কের টাকা তিনি প্রতি বছরই বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ জমা করেন পৃথিবীর দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে।

৫.অ্যাঞ্জেলা মরকেল
অ্যাঞ্জেলা ডোরোটেয়া মরকেল হচ্ছেন জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর। তিনিই বিশ্বের প্রথম নারী প্রভাবশালী ব্যক্তি।তিনি ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির মেকলেনবার্গ-ভোরপোমার্ন প্রদেশ থেকে জার্মান সংসদে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জয়ের মাধ্যমে চ্যন্সেলর নির্বাচিত হন। মরকেল ক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান (CDU) এবং ২০০২ হতে ২০০৫ পর্যন্ত CDU-CSU (ক্রিসচিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন)-এর সংসদীয় জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন।১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হ্যামবুর্গে অ্যাঞ্জেলা মরকেল জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মরকেল পল্লী অঞ্চলে বড় হয়েছিলেন। তখনকার সময়ে অধিকাংশ শিশুদের মত মরকেলও জার্মানির সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টির নেতৃত্বাধীন জার্মান মুক্ত তরুণ নামক তরুণ-আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। মরকেল এই সংগঠনের সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ছিলেন। টেম্পলিন শহরের একটি স্কুলে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি লাইপৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান পড়েন। শিক্ষার্থী থাকাকালে মরকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালুর দাবিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।পরবর্তীতে মরকেল বার্লিনে অবস্থিত জার্মান বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিতে ভৌত রসায়ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেন এবং এখানেই তার কর্মজীবন শুরু করেন। সেসময় তিনি রুশ ভাষা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে শিখেছিলেন। কোয়ান্টাম রসায়নের উপর গবেষণার জন্য তাকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এরপর তিনি এখানে গবেষক হিসেবে কাজ করেন।

৬. ডেভিড ক্যামেরন
ডেভিড উইলিয়াম ডোনাল্ড ক্যামেরনের জন্ম: ৯ অক্টোবর, ১৯৬৬ যিনি লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন। সংসদীয় আসন উইটনি এলাকা থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ ব্যক্তির মধ্যে দশম অবস্থানে রয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন।

৭.স্টিভ জবস
কম্পিউটার ও প্রযুক্তিকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাদের মাঝে স্টিভ জবস প্রধান এক চরিত্র। এ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমরা সবাই তাকে চিনি। প্রযুক্তিতে তাঁর অবদান কারওই অজানা নয়। তিনিও বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাঝে একজন।তিনি তাঁর কাজ দিয়ে এক নতুন বিশ্ব সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর জীবন ছিল পৃথিবীকে বদলে দেয়ার এক বৈপ্লবিক যাত্রা। যে যাত্রার শুরু হয়েছিল তাঁর জন্মের সময় থেকেই।জবসের জন্ম হয় ১৯৫৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন এর দুইজন গ্রাজুয়েটের সন্তান হিসেবে, যাঁরা জন্মের পরই তাঁদের ছেলেকে এ্যাডাপশন বা দত্তক এর জন্য দিয়ে দেন।
ছোটবেলা থেকেই জবস ছিলেন প্রখর বুদ্ধিমান কিন্তু লক্ষ্যহীন। কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়ে ১৯৭৬ সালে স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে এ্যাপল শুরু করার আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালান।
১৯৮৫ সালে তিনি এ্যাপল থেকে বের হয়ে পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিও শুরু করেন এবং দশ বছর পর আবার সিইও হিসেবে এ্যপলে ফিরে আসেন। ২০১১ সালে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে জবস মৃত্যুবরণ করেন। বলা হয়ে থাকে জবসের আনুমানিক সম্পদের পরিমান ছিল প্রায় এক হাজার দুইশ কোটি মার্কিন ডলার। এই সম্পদের বেশিরভাগই এসেছিল ২০০৬ সালে ওয়াল্ট ডিজনির কাছে পিক্সার স্টুডিও বিক্রয়ের থেকে।

৮.মারিও দ্রাঘি
মারিও দ্রাঘি পৃথিবীর ৮ নম্বর প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি একজন ইতালিয়ান ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদ। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ব্যক্তি ব্যাংক অফ ইতালির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

৯.জানেত ইয়েলেন
জানেত লুইস ইয়েলেন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ক্ষমতাধর নারী। তিনি আমেরিকার একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। আমেরিকার বোর্ড অফ গভর্নরস অফ ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন এই ৬৮ বছর বয়সী প্রভাবশালী নারী।

১০.শি জিনপিং
চীনের রাষ্ট্রপতি, চীনের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার মহাসচিব এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান শি জিনপিং বর্তমানে সেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ নম্বর স্থানে অবস্থান করছেন। ১৫ জুন, ১৯৫৩ সালে জন্ম নেন চীনের অন্যতম এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। শি জিনপিং দীর্ঘকাল যাবৎ সক্রিয় ও প্রয়াত সিপিসি নেতা শি জোংশুনের সন্তান।
এরা হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ।এদের মধ্যে অনেককেই অনেক বেশি কষ্ট-সংগ্রাম করে প্রভাবশালী হতে হয়েছে। সুধু প্রভাবশালী বললে ভুল হবে, এরা কেবল প্রভাবশালী নয়, এখন পৃথিবী চালাচ্ছেন যারা তাদের মধ্যে এরা অন্যতম। জীবনকালে তো অবশ্যই তাদের মৃত্যুর পরেও তাদের নাম ইতিহাস এর খাতায় থাকবে চিরন্তন।