আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যা ছাড়া এক মুহুর্ত চলে না, কেনাকাটা থেকে শুরু করে, ঘরে গৃহস্থলির কাজে এমন কি আমাদের শিক্ষা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বর্তমানে ব্যপক প্রসার লাভ করছে। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে দেশ ও জাতি উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে । একই সাথে আধুনিকায়ন হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এর ভূমিকা অপরিসীম। একই সাথে শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষক কোন কিছু শেখান না বরং শিখতে সাহায্য করে। বিশ্বের যে কোন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য চোখের নিমিষে সংগ্রহ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজে লিপ্ত শিক্ষার্থীরা গবেশণার জন্য যে কোন তথ্য নিজ দেশ থেকে খুঁজে পাচ্ছে না, সে তথ্য অন্যান্য দেশের লাইব্রেরী থেকে ই-লাইব্রেরীর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুঁজে বের করছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবই নির্ভর হলে হয় না। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পুস্তক শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়। তাই এ সকল বই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া কখনো কোন পাঠ্যবই হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে তা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়।

বাংলাদেশে শিক্ষার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট তাৎপর্যপূর্ণ বিপ্লব সাধন করেছে। বর্তমানে তাই বাংলাদেশে শিক্ষাভিত্তিক অনেক ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। এই সাইট গুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষার একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আবেদনসহ যাবতীয় কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের আরেকটি বিস্তৃত অবদান হল ই-ল্যার্নিং এর মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে অবস্থান না করেও শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলি সরাসরি দেখাসহ তাতে অংশগ্রহণও করা যায়। অতএব ইন্টারনেট যে আমাদের শিক্ষক্ষেত্রে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখে তা বাস্তব। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে আজকের শিক্ষার্থীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থও হচ্ছে যা প্রতিরোধ করতে পারলেই আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের মর্মার্থ বুঝতে পারব।

তাহলে বাংলাদেশ কেন এসব সুযোগ থেকে পিছিয়ে থাকবে? বিংশ শতাব্দীতে উন্নত বিশ্ব শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় যে উত্কর্ষ সাধন করতে পেরেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ইংলিশ এন অ্যাকশনের (২০০৯) গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম। এমন হওয়ার পিছনে যৌক্তিক কারণও আছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সাল থেকে স্কুল শিক্ষকদের জন্য আইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে সিপিডি ইন আইসিটি প্রশিক্ষণের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে প্রযুক্তির ছোঁয়াহীন শত বছরের প্রথাগত শিক্ষায় পরিবর্তন সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রেডিও,টেলিভিশন,ওভার হেড প্রজেক্টর,ইন্টারনেট, স্মার্ট বোর্ড ইত্যাদির ব্যবহারের সুবিধা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল না। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে একটি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তর করা মাধ্যমে এসব সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেত্রে বড় ধরণের উত্তোরণ ঘটে চলেছে।

এবার আসি আমাদের শিক্ষা জীবনে ইন্টারনেট এর সুফলঃ ইন্টারনেট সংযোগ এর মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী রা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সহ নানাবিধ শিক্ষা সহজে ঘরে বসেই অর্জন করতে পারবে।আবার ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করা যায়। এবং এর মাধ্যমে টাকা অর্জন করাও সম্ভব।বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারা দেশের উন্নত অঞ্চল থেকে অনুন্নত অঞ্চলে পাঠদান করা সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সহজে পরীক্ষার রুটিনসহ,শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষা সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্য পাওয়া যায় ঘরে বসেই।অজানা তথ্য গুলো ইন্টারনেট এর তথ্য ভান্ডার থেকে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। শিক্ষা বা যে কোনো বিষয়ে সমস্যা বা পরামর্শ ইন্টারনেট-এ পাওয়া সম্ভব।ইন্টারনেট এর সুফল এর সাথে সাথে কিছু কুফলও রয়েছে তা হলোঃঅতিরিক্ত ইন্টারনেট ভিত্তিক ডিভাইস ব্যবহার করলে আমাদের চোখে ও মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে দৃষ্টি শক্তি ও স্বরণ শক্তি হ্রাস পেতে পারে। প্রশ্ন আউটের নামে বিভিন্ন গুজব ইন্টারনেট-এ ছড়ানো হয়। যা এক শিক্ষিত জাতিকে ধংশের পথে নিয়ে যায়। ইন্টারনেট-এ গুজব ছড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশের মত শিক্ষায় প্রযুক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির গুনগত মান ও ব্যাপকতা, প্রশিক্ষণের উত্কর্ষতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সর্বোপরি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজন শিক্ষকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যা শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষম এমন যোগ্যও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।