বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম বলেন “সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে।”
“সফল মানুষের সাথে অসফল মানুষের প্রধান পার্থক্য শক্তি বা জ্ঞান নয়। পার্থক্যটা হলো সত্যিকার সফল হওয়ার ইচ্ছা।”
– ভিন্স লম্বারডি (আমেরিকান ফুটবলার ও কোচ) বলেছেন “সফল হওয়া কঠিন নয়,কিন্তু সহজ ও নয়।” সফল হতে হলে অবশ্যই নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগাতে হবে।নিজের বুদ্ধিমত্তাকে পরিস্ফুটিত করতে হবে।তবেই আপনি সফলতার পথ দেখতে পাবেন।”
সফলতার সংজ্ঞা কি হতে পারে?
একজন ব্যাক্তি যখন নিজের মেধা আর শ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তখন ঐ লক্ষে পৌঁছানো কে সফলতা বলা যেতে পারে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে সাফল্যের পথ সর্ম্পকে স্বামী বিবেকানন্দ (ভারতীয় পন্ডিত, সাধক, ও লেখক) বলেন “একটি লক্ষ্য ঠিক করো। সেই লক্ষ্যকে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলো। চিন্তা করো, স্বপ্ন দেখো। তোমার মস্তিষ্ক, পেশী, রক্তনালী – পুরো শরীরে সেই লক্ষ্যকে ছড়িয়ে দাও, আর বাকি সবকিছু ভুলে যাও। এটাই সাফল্যের পথ।” সাফল্য পেতে হলে কঠোর সাধনায় নিজকে মগ্ন রাখতে হবে। অন্যরা কি বলছে তা না বিশ্বাস করে নিজের আত্মবিশ্বাস এর প্রতি যত্মবান হতে হবে। তাহলেই পেরোতে পারা যাবে সফলতার অন্তিম পথ।
সাফল্য কি স্বপ্নের উপর নির্ভর করে?
হ্যা! ধরুন আপনি আপনার বাসা থেকে বের হয়েছেন কিন্তু কি কারনে তা জানেন না। তাহলে আপনার জীবন অতিবাহিত হবে শুধু কারন খুজতেই। অতএব আগে ভাবুন কারন টা কি তারপর তা হাসিল করার জন্য বের হয়ে পড়ুন। এখানে “কারন” বুঝানো হয়েছে স্বপ্নকে আর বের হয়ে পরা বুঝানো হয়েছে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যকে। মানুষ প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে কিন্তু সবাই কি সব স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত করতে পারে ? স্বপ্ন নিয়ে কিছু উক্তি পরিলক্ষিত করা যাক। এ পি জে আবদুল কালাম স্বপ্ন নিয়ে বলেন “স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।” অর্থাৎ আগে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখুন তারপর তা বাস্তবে রুপান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান।
এবার দেখে আসি কিছু সফল মানুষের নাম ও তাদের সাফল্যের রহস্য।
১. মাক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসঃ তার নাম কম বেশি সবাই জানেন। তিনি টানা কয়েক বছর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যেক্তিদের তালিকায় প্রথম ছিলেন। ছোটকাল থেকেই তিনি প্রোগ্রামিং ভালবাসতেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে কোম্পানি খুলবেন এবং তা নিয়েই মগ্ন থাকবেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে তিনি উইন্ডোজ আবিষ্কার করেন। ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তা পেতে থাকে পুরো বিশ্ব জুড়ে। কিছু কিছু প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে তিনি কাজ করতে ভালবাসতেন। তিনি অত্যন্ত কঠোর প্ররিশ্রমী। তিনি কাজ করতে করতে অফিসেই ঘুমিয়ে পরতেন। তিনি খুব অল্প সময় বিশ্রাম নিতেন এবং অনেক সময় ধরে কাজ করতেন। তার শ্রেষ্ঠ উক্তির মধ্যে একটি হলো “যদি আপনি গরীব হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সেটি আপনার দোষ নয়। কিন্তু যদি আপনি গরীব হয়ে মারা যান, তাহলে সেটি আপনার দোষ।”

২. আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনক আলবার্ট আইন্সটাইনঃ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি একজন। তার বিজ্ঞান বিষয়টি খুবই ভাল লাগতো ছোট কাল থেকেই। তার শ্রেষ্ঠ উক্তির মধ্যে একটি হলো “Imagination is everything. It is the preview of life’s coming attractions. Imagination is more important than knowledge.” অর্থাত, “কল্পনাই সব। এটি জীবনের আসন্ন আকর্ষণগুলির পূর্বরূপ। কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ.”

৩. আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাঃ তার জীবন ছিলো ব্যার্থতায় পূর্ণ।তিনি ৪বার ফেল করে কলেজে উঠেন।তখন ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট তিনি বোঝেন। তার জীবনী থেকে অনেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন।’হ্যাং-চাও দিয়ানজি ইউনিভার্সিটি’তে ইংরেজীর লেকচারার হিসেবে যোগ দেয়ার আগে তিনি ৩০টি চাকরির জন্য চেষ্টা করেন এবং প্রতিটিতেই ব্যর্থ হন।একটি টক শোতে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জ্যাক মা বলেছিলেন :”আমি যখন পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করলাম তখন ১০ জনের মধ্যে ৯জনের চাকরি হল। আমাকে বলা হল, ‘তুমি উপযুক্ত নও’। আমার শহরে যখন কেএফসি আসলো আমরা ২৪ জন চাকরির আবেদন করেছিলাম। ২৩ জনের চাকরি হল আর আমি বাদ পড়লাম। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আমি ১০ বার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলাম। তারপর চিন্তা করলাম ‘হয়তো একদিন আমি হার্ভার্ডে লেকচার দেব।” তার এত ব্যার্থতা থাকা সত্ত্বেও তার আলিবাবা ই-কমার্স বিশ্ব বাণিজ্যে ভূমিকা রাখছে।

৪. বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার ( Harry Potter)” এর লেখিকা জে. কে. রাউলিংঃ১৯৯০ সালে জে. কে. রাউলিং ম্যানচেস্টার থেকে যাত্রী বোঝাই ট্রেনে করে লন্ডন আসার পথে হ্যারি পটার বইয়ের ধারণা তার মাথায় আসে।তিনি এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার ওয়েবসাইটে বলেন “প্রায় ৬ বছর বয়স থেকে আমি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লিখছি কিন্তু কোনো আইডিয়া সম্পর্কে আমি পূর্বে এত উত্তেজিত ছিলাম না। আমি প্রচন্ড হতাশ ছিলাম তখন কারণ, আমার কাছে তখন কোন ভাল কলম ছিল না, এবং অন্যের কাছ থেকে কলম চাইতে আমার লজ্জা লাগছিলো। আমি এখন মনে করি, তা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে, কারণ আমি তখন কেবল বসে বসে চিন্তা করেছি, চার ঘণ্টার (ট্রেন বিলম্বিত) জন্য, এবং সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আমার মগজে জমা হচ্ছিল, এবং এই চর্মসার, কালো চুলের, চশমাপরা ছেলে যে জানত না যে সে একজন জাদুকর, আমার কাছে ক্রমেই আরো বাস্তব মনে হতে থাকে। আমি মনে করি যে আমাকে যদি একটু ধীরে কল্পনা করতে হতো যাতে আমি তার কিছু অংশ কাগজে লিখতে পারি তাহলে আমি হয়তো সেই কল্পনার কিছু অংশ বাদ দিয়ে দিতাম (যদিও এখনও আমি অবাক হই, আমি যা ভ্রমণের সময় কল্পনা করেছিলাম তার কতটুকু আমি লেখার সময় ভুলে গেছি)।”

৫. আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংঃ জীবনের বেশির ভাগ সময় মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন। তারপরেও তার অর্জনের খাতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মহিমান্বিত।তিনি বিশ্বাস করতেন যে তার অসুস্থতা তার জন্য কিছু উপকারও এনে দিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, “অসুস্থ হবার আগে তিনি জীবন নিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন।” তিনি এই অসুস্থতা নিয়ে বই লিখেছিলেন মহাকর্ষের যাবতীয় বিষয় নিয়ে। তিনি কথা বলতে পারতেন না। কিন্তু একটি যন্ত্রের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারতেন। এখান থেকেই বোঝা যায় মনের ইচ্ছা-ই হচ্ছে বড় শক্তি ।

উপরে মাত্র ৫ জন নিয়ে আলোচনা করা হলেও এই পুরো বিশ্ব জুড়ে আরো অনেক মানুষ রয়েছে যাদের কিছু প্রতিবান্ধকতা থাকা সত্ত্বেও জীবনে সার্থক হয়েছেন। জীবনে সফল হয়েছেন। জীবনকে জয় করেছেন।তারাও প্রথমে সাধারন ছিলেন। কিন্তু পরে অসাধারণ হয়ে উঠেন। বুদ্ধি মত্তা, সৃজনশীলতা, ইচ্ছা,আত্মবিশ্বাস এর মাধ্যমেই জীবনে সফলতা আনা সম্ভব। ভয়কে জয় করতে হবে।তা নাহলে পিছিয়ে পরতে হবে।