পৃথিবী খুব দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, আর তার সাথে পরিবর্তন ঘটছে মানুষের আচরন, মন-মানসিকতা, সর্বোপরি জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্র। আমাদের বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্যস্ততম সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা এখন প্রতিটি মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে সমতালে জীবন যাপনের মান পরিবর্তনের সাথে সাথে দেখা দিচ্ছে বেশ কিছু জটিলতাও।
আজকাল আমাদের সমাজের খুব স্বাভাবিক একটা চিত্র হচ্ছে অনু পরিবার বা single family। যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে শুধু স্বামী, স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন বেশির ভাগ মানুষ। আর উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে বেশির ভাগই দেখা যায় স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনেই চাকরী করেন,, ফলে তাদের জীবনে জটিলতা এবং সমস্যা দুটোই অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে একটু সচেতনতা আর সমঝোতা থাকলে এর অনেক কিছুই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
প্রথমতঃ চাকরিজীবি নারী ও তাদের সাংসারিক বিষয় নিয়ে যদি বলি,একজন চাকুরীজীবি নারী সকালবেলা ঘুম ভেঙে প্রথমেই ভাবেন,তাকে রান্না করতে হবে, সবাইকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে তারপর অফিসের জন্য বের হতে হয়। আর যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে তো আরো বাড়তি ঝামেলা রয়েই যায়। সব দিক সামলে নিয়ে তারপর তিনি যখন অফিসের জন্য বের হন, তখন রাস্তায় নেমেও তাকে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তারপর অফিসে পৌঁছাতে হয়। দিনব্যাপী ব্যস্ততা শেষে বাসায় পৌঁছে ফের সেই সাংসারিক ব্যস্ততায় ডুবে যেতে হয়। এর মধ্যে একজন নারী বা পুরুষ যে ই হোন না কেনো তার নিজের শরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়ার তেমন কোনো সময়ই তারা করে উঠতে পারেন না। ফলে দেখা যায়, নানাবিধ রোগ ব্যাধি যেমন, ডায়াবেটিস, প্রেসার, insomnia বা অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এ তো গেলো শুধু শারীরিক সমস্যা। কিন্তু এরকম ব্যস্ত জীবন যাপনের প্রভাব নিজেদের সম্পর্কেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে । দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার ফলে সংসারে সন্তান বা পরিবারের অন্যদের সময় দেয়া সম্ভব হয় না, আর দিলেও তা quality time হয় না। এতে করে পরিবারের লোকজনদের সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সম্পর্কে জটিলতা এমনকি ভাঙনেরও সৃষ্টি করে।তাই একটু সচেতন হলেই এ সকল সমস্যার পরিমান অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
পরিবারে যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরী করেন, তবে তারা যদি সম্ভব হয় একসাথে অফিসের জন্য বের হলেন,আর ফেরার সময়টুকুও একসাথে ফিরলেন,তবে পথিমধ্যে দুজন দুজনকে সময় দিতে পারলেন,বাড়ি ফেরার পর সংসারের কাজে যতোটুকু সম্ভব দুজনেই হাত লাগালেন, এতে করে পরিবারের বন্ডীং টা মজবুত হবে। একজনের প্রতি অপর জনের আস্থার একটা জায়গা তৈরি হবে।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারের লোকজন দের নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি শরীরের প্রতি অবিচার করলে হবে না, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ব্যস্ততার মাঝেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজগুলোকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এতে করে কাজগুলো গুছিয়ে করাটা অনেক সহজ হবে সেই সাথে ঝামেলাও কমে আসবে। যেমনঃ সকালে ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠে তারপর বাইরে হাঁটতে গেলেন তারপর বাসায় ফেরার পথে বাসার বাজারটা ও করে নিয়ে আসলেন, এতে করে একসাথে দুটো কাজই হয়ে গেলো।
আবার যিনি গৃহিনী তিনিও যদি একইভাবে সকাল বেলা উঠে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করেন, এটা তার শরীরের এবং সাংসারিক কাজের জন্য অনেক উপকারী হয়। ব্যস্ততম এই জীবনে শরীর-মন এবং সম্পর্কের জটিলতা এড়িয়ে চলতে চাইলে multitasker হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির কল্যানে আমরা ঘরে বসেই অনেক তথ্য জানতে পারছি। ইয়োগা কিংবা যোগ ব্যায়ামের অনেক জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে, কেউ যদি চান ঘরে বসেই এগুলো অনুশীলন করতে পারেন।মোট কথা একটি নির্দিস্ট রুটিন মেনে চলার মানসিক অভ্যাস গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী আগের দিনে মানুষ যেভাবে সন্ধ্যা নামতেই ঘুমিয়ে পড়তো আর ভোর হওয়ার সাথে সাথে উঠে পড়তো, মূলত এটিই স্বাস্হ্যসম্মত অভ্যাস।কিন্তু আমরা আমাদের ব্যস্ত আর যান্ত্রিক জীবনে এমনটা এখন কল্পনাও করতে পারি না। বাইরের অপরিচ্ছন্ন খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবন যাপন আর সব ক্ষেত্রে অসুস্হ প্রতিযোগিতা আমাদের জীবনটাকে আরো বেশি জটিল করে তুলছে। এতে করে শারীরিক, মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কগুলিও তার স্বাভাবিক রূপ হারাচ্ছে।
তাই,,সর্বোপরি নিজেকে সময় দিতে হবে, সময়ানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সুস্থ জীবন এবং সুস্হ সম্পর্ক উভয়ের জন্যই নিয়ম মেনে জীবন যাপন আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।